Sunday 18 March 2018

রাতকানা কি? রাতকানা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে রাখুন।

রাতকানা হচ্ছে ভিটামিন এ-এর অভাবজনিত রোগ (জেরোফথালমিয়া) এর প্রথম পর্যায়৷ প্রধানত ভিটামিন-এ এর অভাবে বাচ্চাদের এই রোগ হয়ে থাকে৷ এর ফলে রোগী দিনে স্বাভাবিক দেখবে কিন্তু রাতে বা অল্প আলোতে প্রথম প্রথম ঝাপসা বা হালকা দেখলেও পরে দেখতে পায় না৷ আমাদের দেশে ৬ বছরের কম বয়েসী শিশুদের মধ্যে রাতকানা রোগ বেশি দেখা যায়৷ অথচ আমরা একটু সচেতন হলেই এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারি৷

 
কারণ:
•    খাবারে ভিটামিন এ-এর অভাব৷
•    বাচ্চা অল্প ওজনে জণ্ম হলে এবং অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর এই রোগ বেশি হয়৷
•    ডায়রিয়া, হাম, নিউমোনিয়া ইত্যাদি হলে শরীরে ভিটামিনের অভাব হয়৷
•    বাড়ন্ত বয়সে অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে না পারলে এই রোগ হতে পারে৷
 
লক্ষণ:
•    প্রথমে ভোরে ও সন্ধ্যায় অল্প আলোতে দেখতে অসুবিধে হয়, একে রাতকানা বলে৷
•    পরে তার চোখ শুকিয়ে যায় (জেরোসিস), চোখের সাদা অংশের চকচকে ভাবটা চলে গিয়ে সেটা কুঁচকিয়ে যায়৷
•    চোখে ছোট ছোট ছাই রঙের বুদবুদ ভর্তি দাগ (বিটট্স  স্পট) দেখা দেয়৷
•    এরপর চোখের কর্নিয়া নরম হয়ে যায়৷
•    কর্নিয়াতে ঘা হয়৷ কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়৷ নরম কর্নিয়া ঠেলে ফোঁড়ার মতো বেরিয়ে আসতে পারে বা ফুটো হয়ে যেতে পারে৷
•    অবশেষে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়৷
চিকিৎসা:
রাতকানা রোগে আক্রান্ত শিশুকে (১ বছরের বেশি বয়স) তিনটি ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে৷ ক্যাপসুল খাওয়ানোর নিয়ম হল প্রথম দিন একটি, দ্বিতীয় দিনে একটি এবং দুই সপ্তাহ বা ১৪ দিন পর একটি খাওয়াতে হয়৷ তবে এক বছরের কম বয়সী শিশুরা একই নিয়মে অর্ধেক ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাবে অর্থাৎ প্রতিবারে চার ফোঁটা৷ কারণ একটি ক্যাপসুলে মোট আট ফোঁটা ওষুধ থাকে৷ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
 



 
২. রাতকানা প্রতিরোধে কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা যায়?
একটু সতর্ক ও সচেতন থাকলেই রাতকানা থেকে মুক্ত থাকা যায়।

প্রতিরোধ:
•    বাচ্চাকে প্রথম ৫ মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে৷ বুকের দুধ শিশুকে রাতকানা হওয়া থেকে রক্ষা করে৷ বুকের দুধ সম্ভব হলে শিশুর দুই বছর বয়স পর্যন্ত খাওয়াতে হবে৷
•    বাচ্চা হবার দুই সপ্তাহ পর মাকে ২ লক্ষ আই.ইউ. ভিটামিন-এ এর ১ ডোজ খাওয়াতে হবে৷
•    শিশুকে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার (হলুদ ফলমূল ও শাক-সবজি, ডিম/দুধ/কলিজা, মাছ, মাংস,) খাওয়াতে হবে৷
•    ৬ মাস বয়স থেকে শুরু করে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি ৬ মাস অন্তর উচ্চ মাত্রার ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে৷
•    অপুষ্টি রোধ করতে হবে৷
•    বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগলে, হাম, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার পাশাপাশি ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে৷
•    চোখের কালো অংশে কোনও পরিবর্তন (যেমন- ধোঁয়াটে, ঘোলা, ছিদ্র, সাদা হওয়া) দেখা দিলে চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে৷
 
পরামর্শ:
•    প্রতিদিন ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যেমন-
•    গার সবুজ শাক যেমন- কচু-শাক, পুঁইশাক, পালংশাক, মূলা-শাক ইত্যাদি৷
•    হলুদ সবজি যেমন- মিষ্টি কুমড়া, গাজর ইত্যাদি৷
•    হলুদ ফল যেমন- পাকা কাঁঠাল, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি৷
•    প্রাণী জাতীয় খাদ্য বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন- দুধ, ডিমের কুসুম, কলিজা, ছোট মাছ ইত্যাদি৷
শাক-সবজি অবশ্যই তেল দিয়ে রান্না করতে হবে৷ তেল দিয়ে রান্না করে খেলে ভিটামিন-এ বেশি পাওয়া যায়৷ এ ছাড়া ৬ মাস বয়স থেকে শুরু করে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিশুকে ৬ মাস পর পর একটি করে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়াতে হবে৷ ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর মাত্রা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খেতে দেয়া বিপদজনক৷ এতে করে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
 
বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজির চাষ:
যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ লোকই দরিদ্র৷ তাই স্বাভাবিক কারণেই ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ বেশি দামের খাদ্য যেমন- মাছ, কলিজা, দুধ ডিম, পনির, মাখন প্রভৃতি কিনতে পারে না৷ ভিটামিন-এ যুক্ত শাক-সবজি বাড়ির আঙিনায় জমিতে চাষ করলে সহজে ভিটামিন-এ এর চাহিদা মেটানো যায়৷
 
বুকের দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস:
শিশুর জন্মের পর মায়ের শাল দুধ খাওয়াতে হবে৷ কারণ শাল দুধে অধিক মাত্রায় ভিটামিন- এ থাকে৷