Sunday 18 March 2018

রক্তদান ও কিছু প্রয়োজনীয় কথা


রক্তদান  কিছু প্রয়োজনীয় কথা

বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লক্ষ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। যার মধ্যে ২৪% আসে স্বেচ্ছা রক্তদানকারীদের কাছে থেকে। নিকটাত্মীয়কে রক্ত দান করে ৬২%; আর বাকিটা আসে পেশাদার ডোনারদের কাছ থেকে। আমাদের দেশে সাধারণতঃ কারো রক্তের প্রয়োজন হলে পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয়রা রক্ত দান করে থাকেন। মাঝে মাঝে দেখা যায় রক্তের অভাবে আমাদের আপনজন এর মৃত্যু ঘটে থাকে, যাকে হয়তো সময়মত রক্ত দেয়া হলে বাঁচানো সম্ভব হতো। তাই প্রত্যোক মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা উচিৎ। এতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত রক্ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।

একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে নিজেদের ভেতর দুই/তিন জন ডোনার তৈরি রাখা উচিৎ। যারা জরুরী প্রয়োজনে রক্ত দান করতে পারবে। সিজারের সময় তাহলে প্রয়োজনীয় রক্ত খুঁজতে হবে না।

হাসপাতাল বা ব্লাড ব্যাংক বা অন্য কোন সংস্থা থেকে রক্ত কেনার প্রয়োজন হলে অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে –
 
১. কত ব্যগ রক্ত লাগবে 
২. কত সময়ের মধ্যে রক্ত লাগবে
৩. রোগীর সমস্যা কি 
৪. রোগী কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে
৫. রোগীর কেবিন বা ওয়ার্ড নং 
৬. রোগীর নিকটাত্মীয় যিনি রক্ত দান করবেন তার সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে  
  পারেন এমন একজনের পরিচয় সহ মোবাইল নং । 

রক্তদানের উপকারিতা:

১. রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কেননা রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদানের ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্তকণিকা জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। আর বছরে ৩ বার রক্তদান আপনার শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলে ও নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়। 

২. নিয়মিত রক্তদানকারীর হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়।

৩. নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে জানা যায় নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কিনা। যেমন : হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি। 

৪. সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী জটিল বা দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকেন অনেকাংশে। যেমন, নিয়মিত রক্তদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। 

৫. রক্তে কোলেস্টেরলের উপস্থিতি কমাতে সাহায্য করে নিয়মিত রক্তদান। 

৬. রক্তদানে আপনার নিজের অর্থ সাশ্রয়ও হয়। রক্তদান কেন্দ্রের মাধ্যমে রক্ত দিলে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনা খরচে করে দেয়া হয় যা বাইরে করলে খরচ লাগবে প্রায় তিন হাজার টাকার মতো। সেগুলো হলো-এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস। তাছাড়া রক্তের গ্রুপও নির্ণয় করা হয়। 

৭. নিয়মিত রক্তদান হেমোক্রোমাটোসিস প্রতিরোধ করে। শরীরে অতিরিক্ত আয়রনের উপস্থিতিকে হেমোক্রোমাটোসিস বলে। 

৮. স্থূলদেহী মানুষদের ক্ষেত্রে ওজন কমাতেও রক্তদান অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে

রক্ত পরিসঞ্চালন সতর্কতা ও করণীয়:

হাত, পা অথবা চোখ ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব হলেও, রক্ত ছাড়া বাঁচার কথা কল্পনাও করা যায় না। মানবদেহে রক্ত তাই অপরিহার্য। দেহের কোষে কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেয়া, কার্বন-ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য বর্জ্য ফিরিয়ে আনা, হরমোন, লবণ ও ভিটামিন পরিবহন, রোগ প্রতিরোধ, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুতেই রক্তের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই কারও দেহে রক্তের অভাব ঘটলে তা প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে অন্যের রক্ত শিরার মাধ্যমে রোগীর দেহে প্রবেশ করানো তথা রক্ত পরিসঞ্চালন হয়ে ওঠে অন্যতম উপায়। 

রক্তদানের যোগ্যতা : 
কারা রক্ত দিতে পারবেনঃ 
০ মহিলা ও পুরুষ যাদের বয়স ১৮-৪৫ বছর। 
০ পুরুষ যাদের ওজন ৪৭ কেজি বা তার উর্ধ্বে, মহিলা যাদের ওজন ৪৫ কেজি বা তার উর্ধ্বে। 
০ যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় আছে।
 
কারা রক্ত দিবেন নাঃ 
০ রক্তবাহিত বা জটিল রোগ যেমন- ম্যালোরিয়া, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিক, রক্তাস্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, হৃদরোগ, পেপটিক আলসার, হিস্টেরিয়া, চর্মরোগ, রিউমেটিক ফিভার, হাইপারটেনশন, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাদকাসক্ত, এইডস, রক্তক্ষরণ জনিত কোন সমস্যা হলে কিংবা দাঁত তুললে। 
০ ৬ মাসের মধ্যে বড় সার্জারি হলে। 
০ গর্ভবতী মহিলা হলে।
০ মহিলাদের ক্ষেত্রে, যাদের মাসিক চলছে। 

যারা কখনোই রক্ত দিতে পারবে নাঃ 
—এইচআইভি পজেটিভ রোগীরা। 
—সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক নিলে। 
—ক্যানসার, হৃদরোগ, বাতজ্বও, সিফিলিস (যৌন রোগ), কুষ্ঠ বা শ্বেতী রোগীরা। 
—রক্তজনিত রোগীরা। 


যে কারণে রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন পড়ে
রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে প্রয়োজনভেদে রোগীর শরীরে সম্পূর্ণ রক্ত বা রক্তের কোনো উপাদান যেমন লোহিত কণিকা, অণুচক্রিকা বা রক্ত রস দেয়া হয়। 
—যে কোনো কারণে অল্প সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে সাধারণত সম্পূর্ণ রক্ত (whole blood) দেয়া হয়—যেমন দুর্ঘটনা, রক্ত বমি, পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত, প্রসাবকালীন রক্ত ক্ষরণ ইত্যাদি। 
—জটিল বা বড় ধরনের শল্য চিকিৎসার সময়ও সম্পূর্ণ রক্তের প্রয়োজন হয়। 
—বিভিন্ন রকমের অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় সাধারণত লোহিত কণিকা (Packed RBC) দেয়া হয়, যেমন—থ্যালাসেমিয়াসহ অন্যান্য হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া, আয়রনের অভাবজনিত রক্তাস্বল্পতা, হুকওয়ার্মের কারণে অ্যানিমিয়া ইত্যাদি। অবশ্য আমাদের দেশে খরচের কথা বিবেচনা করে এসব রোগীকেও সম্পূর্ণ রক্ত দেয়া হয়। 
—এছড়া হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর, ইত্যাদি রোগে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা দেয়া হয়। 
—রক্তরস দেয়া হয় হিমোফিলিয়া ও অন্যান্য কোয়াগুলেশন ডিজঅর্ডারে এবং আগুনে পোড়া রোগীকে। 


১] দূঘর্টনাজনিত রক্তক্ষরণ – দূঘর্টনায় আহত রোগীর জন্য দূঘর্টনার ধরণ অনুযায়ী রক্তের প্রয়োজন হয়। 

২] দগ্ধতা – আগুন পুড়া বা এসিডে ঝলসানো রোগীর জন্য প্লাজমা/রক্তরস প্রয়োজন। এজন্য ৩-৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। 

৩] অ্যানিমিয়া – রক্তে R.B.C. এর পরিমাণ কমে গেলে রক্তে পযার্প্ত পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের অভাবে অ্যানিমিয়া রোগ হয়। হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়াতে R.B.C. এর ভাঙ্গন ঘটে ফলে 

৪] থ্যালাসেমিয়া – এক ধরনের হিমোগ্লোবিনের অভাবজনিত বংশগত রোগ। রোগীকে প্রতিমাসে ১-২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। 

৫] হৃদরোগ – ভয়াবহ Heart Surgery এবং Bypass Surgery এর জন্য ৬-১০ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। 

৬] হিমোফিলিয়া – এক ধরনের বংশগত রোগ। রক্তক্ষরণ হয় যা সহজে বন্ধ হয় না, তাই রোগীকে রক্ত জমাট বাধার উপাদান সমৃদ্ধ Platelete দেয়া হয়। 

৭] প্রসবকালীন রক্তক্ষরণ – সাধারণত প্রয়োজন হয় না তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ১-২ বা ততোধিক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। 

৮] ব্লাড ক্যান্সার- রক্তের উপাদানসূমহের অভাবে ক্যান্সার হয়। প্রয়োজন অনুসারে রক্ত দেয়া হয়। 

৯] কিডনী ডায়ালাইসিস – ডায়ালাইসিস-এর সময় মাঝে মাঝে রক্তের প্রয়োজন হয়। 

১০] রক্ত বমি – এ রোগে ১-২ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। 

১১] ডেঙ্গু জ্বর – এ রোগে ৪ ব্যাগ রক্ত হতে ১ ব্যাগ Platelete পৃথক করে রোগীর শরীরে দেয়া হয়। 

১২] অস্ত্রপচার – অস্ত্রপচারের ধরণ বুঝে রক্তের চাহিদা বিভিন্ন। 


রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে কী ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারেঃ 

রক্ত পরিসঞ্চালন জীবন রক্ষার অন্যতম উপায় হলেও এটা আবার কখনও কখনও বিভিন্ন ধরনের জটিলতা তৈরি করতে পারে। 
—রক্তবাহিত রোগের সংক্রমণ আমাদের দেশে এখনও একটি প্রধান সমস্যা। হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইডসসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু সহজেই রক্তের মাধ্যমে রক্তগ্রহীতার দেহে প্রবেশ করতে পারে। এর মূল কারণ রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্তটি জীবাণুমুক্ত কিনা তা যথাযথভাবে পরীক্ষা না করা। অনুমোদনবিহীন ব্লাডব্যাংকগুলোতেই এসব রক্ত বিক্রি করা হয়। আর তা আসে মূলত নেশাসক্ত পেশাদার রক্তদানকারীদের কাছ থেকে। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত বা ভেজাল রক্ত— এসব ব্লাডব্যাংক থেকেই আসে। 
—ভুলক্রমে এক গ্রুপের রক্ত অন্য গ্রুপের রোগীকে দিলে রক্ত হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। এই ধরনের ঘটনা কম হলেও একেবারেই হয় না তা নয়। এসব ক্ষেত্রে রক্ত সংগ্রহকারী ও পরীক্ষাকারী ব্লাডব্যাংক, চিকিৎক অথবা নার্স—যে কারও ভুল বা অসতর্কতাই দায়ী। রোগী সাধারণত বুকে-পিঠে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের অভিযোগ করে থাকে। চিকিৎসক দ্রুত ব্যবস্থা নিলে পরবর্তী জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হয়। 
—এছাড়া যে কোনো পরিসঞ্চালনেই কাঁপুনি ও জ্বর আসা এবং অ্যালার্জি জাতীয় ছোটখাটো সমস্যা হতে পারে। 
—যাদের কিছুদিন পরপর রক্ত নিতে হয় তাদের দেহে লৌহের আধিক্যসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। 
—অনেক সময় অধিক রক্ত দ্রুত প্রবেশ করলে বৃদ্ধ অথবা হৃদরোগীর হার্ট ফেইলিওর জাতীয় সমস্যা হতে পারে। 

যে কোনো সময় কারো রক্তের প্রয়োজন হতে পারে, এই কথা মনে রেখে আমরা যদি এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখি তহলে রক্ত পরিসঞ্চালনের সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব। 

আমাদের যেসব উদ্যোগ নিতে হবে তা হলো— 
—নিজের এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের রক্তের গ্রুপ জেনে রাখা। 
—নিকটস্থ ব্লাডব্যাংকের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জেনে রাখা। 
—শুধু নিবন্ধনকৃত ব্লাডব্যাংকে রক্ত দান ও গ্রহণ করা। 
—পেশাদার রক্তদাতার রক্ত ক্রয় না করা। 
—নিজে নিয়মিত রক্ত দান করা ও সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা। 
—রক্তবাহিত রোগে সংক্রমিত হলে রক্ত দান না করা। 
রক্ত নেয়ার আগে সতর্কতা 
—রক্ত নেয়ার আগে প্রয়োজন রক্তের গ্রুপ ঠিক আছে কি-না দেখে নেয়া। 
—অপরিচিত পেশাদার রক্তদাতার রক্ত না নেয়া। পেশাদার রক্তদাতারা অনেকেই মাদকাসক্ত, এমন কি তারা অনেকেই হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ও এইডসসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী জীবাণু ও সংক্রামক ব্যাধির জীবাণু বহন করে। 
—সবচেয়ে ভালো নিজস্ব আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত সুস্থ-সবল লোকের রক্ত নেয়া। 
—স্ক্রিনিং টেস্টের মাধ্যামে রক্তদাতার বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হবে। 
মনে রাখা প্রয়োজন, রক্তের অভাব এবং অনিরাপদ রক্ত দুটোই জীবনের জন্য সমান হুমকি। তাই রক্তের বিকল্প শুধু রক্ত নয় বরং ‘নিরাপদ রক্ত’। 

জেনে রাখুনঃ 

—যথাযথ নিয়ম মেনে জীবাণুমুক্ত উপায়ে রক্তদান করলে রক্তদাতা এবং গ্রহীতার স্বাস্থ্য ঝুঁকির কোন সম্ভাবনা নেই। 
—রক্তদানের পর ১০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে এবং পরবর্তী ৪ ঘণ্টা প্রচুর পানীয় গ্রহণ করতে হবে। কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধূমপান থেকে বিরত থাকা উচিত। 
—রক্তদানের পরপরই শ্রমসাধ্য বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  
—সম্পূর্ণ রক্ত অথবা লোহিত কণিকা (Packed RBC) সাধারণত ১ থেকে ৬ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। ব্যবহৃত এন্টি কোয়াগুল্যান্ট ও প্রিজারভেটিভের ওপর নির্ভর করে তা ২১ থেকে ৪২ দিন ভালো থাকে। 
—সাধারণত ৪ ইউনিট রক্ত থেকে ১ ইউনিট প্লাটিলেট পাওয়া যায়। যথাযথ প্রক্রিয়ায় রাখলে তা ৫ দিন ভালো থাকে। 
—ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা- ১৮ ডি.সে. তাপমাত্রায় ১ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে। 
—সম্পূর্ণ রক্ত দিতে সাধারণত ২ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। প্লাটিলেট দিতে কম সময় লাগে। 
—রক্ত গ্রহণ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়া করতে কোনো সমস্যা নেই। এমনকি নার্সের সহায়তা নিয়ে বাথরুমেও যাওয়া যাবে।
—রক্ত দেয়া অবস্থায় সামান্য জ্বর বা অ্যালার্জি দেখা দিলে ভয়ের কিছু নেই। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিহিস্টামিন বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিলেই চলবে। 
—রক্ত দেয়ার আগে এবং রক্ত চলাকালীন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে রক্তের গ্রুপ, ব্যাগের নম্বর, রোগীর নম্বর, নাম ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখতে হবে। 

রক্তদান ও রক্ত দানের পরঃ- 

রক্তদানের আগে প্রতিটি রক্তদাতাকে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। সেগুলোর সঠিক উত্তর দিতে হবে। রক্তদাতার শারীরিক তাপমাত্রা, রক্তচাপ, নাড়ীর গতি পরীক্ষা করা হয় এবং রক্তদাতার রক্ত জীবানুমুক্ত কি না তা জানার জন্য সামান্য রক্ত নেয়া হয়। এছাড়া এই রক্তের মাধ্যমে রোগী রক্তদাতার রক্তের মধ্যে কোন জমাটবদ্ধতা সৃষ্টি হয় কি না তাও পরীক্ষা করা হয় (ক্রসম্যাচিং)। রক্ত পরীক্ষার পর কারও রক্তে এইডস, হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস -সি, সিফিলিস বা অন্য কোন জীবানুর উপস্থিতি ধরা পরলে তাকে (রক্তদাতা) প্রয়োজেনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের পরামর্শ দেয়া হয়।
রক্তদানের পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে- যথেষ্ট বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। রক্তদাতা প্রয়োজন মনে করলে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারে। রক্তদানের সময় মাথা- শরীর সমান্তরাল থাকতে হবে। দূর হতে রক্ত দিতে এলে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে হবে। রক্ত দান করার পরে অবশ্যই ন্যূনতম ৫ মিনিট শুয়ে থাকতে হবে। [রক্তের প্রবাহ সমগ্র শরীরে স্বাভাবিক হবার জন্য এটা অতীব জরুরী]। সাধারণত রক্তদান করার পর অতিরিক্ত দামী খাবার গ্রহনের প্রয়োজন নেই। তবে রক্তদানের পর সপ্তাহ খানেক স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য সময়ের দ্বি-গুণ পানি পান করতে হবে। কেননা একজন রক্তদাতা যেটুকু রক্ত দান করেন [সাধারণত ১ পাউন্ড] তার প্রায় ৬০ ভাগ ঐ সময়ের মধ্যে পূরণ হয়। রক্তদানের পর অবশ্যই তারিখ মনে রাখতে হবে। 

বেশিরভাগ রক্ত দাতাই রক্তদানের পর কোন সমস্যা অনুভব করেন না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তদাতা তলপেটে ব্যাথা, দূবর্লতা, মাথা ঘোরা, সূঁচ প্রবেশের স্থানে ক্ষত লালচে দাগ এবং ব্যাথা অনুভব করতে পারেন। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে রক্তদাতা জ্ঞান হারাতে পারে বা মাংসপেশীতে খিচুনি ধরতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব সমস্যা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, কোন ঔষধের প্রয়োজন হয়না। 

উপসংহারে বলা যায়, রক্ত পরিসঞ্চালন অবশ্যই নিরাপদ হতে হবে। তা না হলে মানুষের জীবন রক্ষার পরিবর্তে অনিরাপদ রক্ত সঞ্চালনে জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এর জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা কার্যকর করা অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে রক্তবাহিত রোগগুলো প্রতিরোধ ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। 



ব্লাড ব্যাংক: 
১. সন্ধানী- ফোন: ৮৬২১৬৫৮,ফ্যা.: ৮৬২১৬৫৮ 

২. সন্ধানী (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখা)- ফোন: ৯৬৬৮৬৯০, ৮৬১৬৭৪৪, ৯৬৬৩৪২৯ 
ফ্যা.: ৯৬৬৮৬৯০, ৮৬১৬৭৪৪, ৯৬৬৩৪২৯ 

৩. সন্ধানী (ঢাকা ডেন্টাল কলেজ শাখা)-ফোন: ৮০১৭১৪৬, ৯০০২০৩৫ 
ফ্যা.: ৮০১৭১৪৬, ৯০০২০৩৫ 

৪. রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড সেন্টার- ফোন: ৯১১৬৫৬৩, ৮১২১৪৯৭ 
ফ্যা.: ৯১১৬৫৬৩, ৮১২১৪৯৭ 

৫. সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ব্লাড ব্যাংক- ফোন: ৭৩১৯১২৩, ফ্যাক্স: ৭৩১৯১২৩ 

৬. ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল- ফোন: ৮৩১৭০৯০, ৮৩২১৪৯৫ 
ফ্যাক্স: ৮৩১৭০৯০, ৮৩২১৪৯৫ 

৭. মুক্তি ব্লাড এন্ড প্যাথলজি- ফোন: ৮৬২৪২৪৯, ফ্যাক্স: ৮৬২৪২৪৯ 

৮.বরিশাল প্যাথলজি ব্লাড ব্যাংক- ৯১২৮৬৮৯ 

৯. ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক- ৮১১৭৩৫৬ 

১০. ঢাকা ব্লাড ব্যাংক- ৬০৮৫৭২ 

১১. ডিএমসি ব্লাড ব্যাংক- ৫০৫০২৬-২৯ 

১২. ডায়াগনষ্টিক ব্লাড ব্যাংক- ৮১১৫৯৪৪ 

১৩. ডুনার লাইফ সেভ ব্লাড ব্যাংক- ৭৩০০০৪৮ 

১৪. ল্যাব কেয়ার ব্লাড ব্যাংক- ৮৬২৭৮৮৫ 

১৫. মেডিফেয়ার ব্লাড ব্যাংক- ৯৬৬২৭৬২ 

১৬. মুক্তি ব্লাড ব্যাংক- ৮৬২৪২৪৯ 

১৭. রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংক- ৯১১৬৫৬৩, ৮১২১৪৯৭ 

১৮. সন্ধানী আই ব্যাংক- ৮৬১৪০৪০ 

১৯. সলিমুল্লাহ মেডিকেল ব্লাড ব্যাংক- ৭৩১৯১২৩, ৭৩১৯০০২-৫ 

২০. সন্ধানী মেডিকেল ব্লাড ব্যাংক- ৯৬৬৮৬৯০, ৮৬২৪০৪০, ৮৬৬৩৪২৯ 

২১. সন্ধানী ব্লাড ব্যাংক (ডেন্টাল)- ৮০১৭১৪৬ 

২২. বাঁধন ব্লাড ব্যাংক - ৮৬২৯০৪২