Sunday 18 March 2018

আপনার বাসায় অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার আছে তো ?

একটু অসাবধানতা বা ছোট খাটো ভুল থেকে ঘটে যেতে পারে বড় ধরণের অগ্নি দুর্ঘটনা। তাই সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। অগ্নি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সতর্কতার নিয়মাবলী আমাদের মেনে চলতে হবে। একটুখানি অসতর্কতা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। আপনার পরিবার পরিজন আর সম্পত্তিকে অগ্নি দুর্ঘটনার থেকে নিরাপদ রাখতে কতখানি সচেষ্ট আপনি? কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কি?

বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে তাই বাসায় রাখুন অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার। সুরক্ষিত রাখুন আপনার পরিবার পরিজন আর সম্পত্তি। অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডারের ব্যবহার ও অন্যান্য বিষয় নিচে উল্লেখ করা হলে :
অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও তার ব্যবহারঃ
অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র একটি মজবুত মেটাল সিলিন্ডার যার ভেতর পানি বা অদাহ্য অন্য কোন পদার্থ (তরল কার্বন-ডাই-অক্সাইড উদাহরন স্বরূপ) উচ্চ চাপে সংরক্ষিত থাকে। যখন লিভার চেপে সিলিন্ডারের ভালব খোলা হয় তখন ভিতরে রক্ষিত তরল সজোড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে যেমনটা হয় এ্যারোসলের ক্ষেত্রে।
অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের মুখে একটি সেফটিপিন দিয়ে আটকানো থাকে। যন্ত্র ব্যবহার করার সময় এই সেফটি পিন টান দিয়ে খুলে নিতে হয়। তারপর অপারেটিং লিভার নিচের দিকে চাপ দিলেই নল দিয়ে বেরিয়ে আসে গ্যাস অথবা ফোম। নির্গত গ্যাস শুধু আগুনের শিখা লক্ষ করে ছড়িয়ে দিলে কাজে আসবেনা। সবচেয়ে ভাল ফল পেতে হলে জ্বালানী (যা জ্বলছে) লক্ষ করে গ্যাস ছাড়তে হবে। এবং অবশ্যই গ্যাস নির্গমন পাইপ ডানে-বায়ে নাড়াতে হবে (ঝাড়ু দেয়ার মত) যাতে করে চারপাশ থেকে বাষ্প উড়ে চলে যায়। আর এই কাজটা করতে হবে নিরাপদ দূরত্বে থেকে এবং আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যেতে হবে যখন আগুন নিভতে শুরু করবে। কোন কোন নির্বাপণ যন্ত্রের মুখে চাপ নির্দেশক মিটার থাকে।
অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের গায়ে ব্যবহার নির্দেশিকা দেয়া থাকে। এই নির্দেশিকা দুর্ঘটনা ঘটার আগেই ভালভাবে পড়ে নেয়া উচিত। কারন কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানা না থাকলে প্রয়োজনের সময় সেটা ব্যবহার করা হয়ত সম্ভব নাও হতে পারে।
অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রের প্রকারভেদঃ
আগুনের ধরনের উপর নির্ভর করে কোথায় কোন নির্বাপণ যন্ত্র ব্যবহার করতে  হবে। খুব ভাল, কার্যকর ও জনপ্রিয় অগ্নিনির্বাপণ উপাদান হচ্ছে পানি। কিন্তু ভুল জায়গায় এর ব্যবহার মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। পানি সাধারনতঃ জ্বলন্ত কাঠ, বাঁশ, কাগজ, কার্ড বোর্ড এই জাতীয় পদার্থের আগুন নেভাতে পারে। কিন্তু পানি কখনোই বৈদ্যুতিক কিংবা দাহ্য তরলের আগুন নেভাতে পারেনা। বৈদ্যুতিক আগুনে পানি ঢাললে তা আপনাকে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ঠ করতে পারে। আর দাহ্য তরলের আগুনে পানি ঢাললে তা আগুনকে আরও ছড়িয়ে যেতে পারে। এতে ক্ষয় ক্ষতি আরো বেড়ে যেতে পারে।
একটি নিরাপদ অগ্নিনির্বাপণ উপাদান হচ্ছে ড্রাই কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যখন নির্বাপণ যন্ত্রের ভালব খোলা হয় তখন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সম্প্রসারিত হয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসে পরিণত হয়। যেহেতু কার্বন-ডাই-অক্সাইড অক্সিজেনের চেয়ে ভারী তাই এটি জ্বালানীর চারপাশ থেকে অক্সিজেনকে সরিয়ে দেয়। অক্সিজেনের অভাবে আগুন আর জ্বলতে পারে না।
সবচেয়ে জনপ্রিয় অগ্নি নির্বাপণ উপাদান হচ্ছে ড্রাই ক্যামিকাল ফোম বা পাউডার যা সোডিয়াম বাই কার্বনেট (সাধারন বেকিং সোডা), পটাশিয়াম বাই কার্বনেট অথবা মনো এ্যামোনিয়াম ফসফেট দ্বারা তৈরি। বেকিং সোডা যখন উত্তপ্ত হয় তখন তা অল্প তাপেই (৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) ভেঙ্গে যায়। এবং সোডা ভেঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড-এ পরিণত হয়। সাথে থাকে ইনসুলেটিং ফোম যা একত্রে আগুনকে আবদ্ধ করে ফেলে এবং অক্সিজেন অপসারন করে। ফলে খুব দ্রুত আগুন নিভে যায়।
আগুনের ধরন ভেদে চার ধরনের নির্বাপণ যন্ত্র পাওয়া যায় :
ক্লাস এ :
এ ধরনের নির্বাপণ যন্ত্র কাঠ, বাঁশ, কাগজ, প্লাস্টিক ইত্যাদি পদার্থের আগুন নেভাতে পারে এবং এধরনের যন্ত্রে নির্বাপণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয় পানি। সিলিন্ডারের গায়ে পানি ধারন ক্ষমতা ও কতটুকু আগুন নেভাতে সক্ষম তা উল্লেখ থাকে।
ক্লাস বি :
এ ধরনের নির্বাপণ যন্ত্র পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, গ্রীজ ইত্যাদি পদার্থের আগুন নেভাতে পারে। সিলিন্ডারের গায়ে কত বর্গফুট আগুন নেভাতে সক্ষম তা উল্লেখ থাকে।
ক্লাস সি :
এ ধরনের নির্বাপণ যন্ত্র বৈদ্যুতিক আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের যন্ত্রের গায়ে কোন রেটিং থাকেনা।
ক্লাস ডি :
এ ধরনের নির্বাপণ যন্ত্র রাসায়নিক পরীক্ষাগারে দাহ্য ধাতুর (যেমনঃ ম্যাগনেসিয়াম, টাইটানিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম) আগুন নেভাতে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের যন্ত্রের গায়েও কোন রেটিং থাকেনা। এবং এ ধরনের যন্ত্র কেবল মাত্র কাস ডি আগুনের জন্যই তৈরি, অন্য কোন আগুনে এ যন্ত্র ব্যবহার করা যায়না।
যে ধরনের নির্বাপণ যন্ত্রই ব্যবহার করুন না কেন একটা কথা মনে রাখতে হবে এসব যন্ত্র অল্প কিছুক্ষন, হয়তোবা ১০/১২ সেকেন্ড ব্যবহার করা যায়। তাই ব্যবহার করার সময় যাতে পুরোটা কাজে লাগে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তা না হলে অপচয় হওয়ার আশঙ্কা আছে।
শেষ কথা :
আগুন আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনের সাথে জড়িত। আগুন ছাড়া আমাদের চলেনা। আবার এক মুহুর্তের অসতর্কতা নষ্ট করতে পারে মূল্যবান সম্পদ ও কেড়ে নিতে পারে অনেক অমূল্য প্রাণ। তাই আগুন ব্যবহারে যেমন সতর্ক হতে হবে তেমনি আগুন যদি লেগেই যায় তাহলে কি করতে হবে তাও আমাদের ভাল ভাবে জানতে হবে।
আগুন বিষয়ে গনমাধ্যমের উচিত ব্যাপক জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেয়া। আর আমাদেরও ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার। আমরা যারা এ বিষয়ে জানি তারা আমাদের আশপাশের জনগনকে সচেতন করে তুলতে পারি। আর প্রত্যেকের বাড়ি, দোকান বা অফিসে অন্ততঃ একটা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা উচিত। প্রাথমিক খরচটা হয়ত একটু বেশি এবং হয়তবা কখনোই এটা ব্যবহার হবেনা, কিন্তু বিপদের সময় এই যন্ত্রটিই আপনার অনেক মূল্যবান সম্পদ বাচিঁয়ে দেবে এবং রক্ষা করবে অমূল্য জীবন। তাই আসুন আগুন ব্যবহারে নিজে সতর্ক হই এবং অন্যকেও সচেতন করে তুলি।