Sunday 18 March 2018

ভূমিকম্পে মোকাবিলায় করণীয় বিষয়সমূহ

ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে রাজধানী ঢাকার নাম। সম্প্রতি প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রে তৈরি হওয়া ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানীসহ সারাদেশ। একটি সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকা শহরের ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়া এবং প্রায় দুই লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভূমিকম্পের যেহেতু কোনো পূর্বাভাস পাওয়া যায়না তাই ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য আমাদের আগে থেকেই কিছু সতর্কতা নিয়ে রাখতে হবে। নগর পরিকল্পনার সময় ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য সকল ধরণের স্থাপনার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিল্ডিং কোড মেনে চলতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বিল্ডিং, অতি পুরাতন ঘরবাড়ি ও স্থাপনা সংস্কার করতে হবে।
এছাড়া, ব্যক্তি পর্যায়েও কিছু সাবধানতা নিয়ে রাখা প্রয়োজন।

ভূমিকম্পের আগে করণীয়:
১। বাড়ি বা কর্মক্ষেত্রের ভেতরে ও বাইরে নিরাপদ স্থানগুলো চিহ্নিত করুন, যেন ভূমিকম্পের সময় ভাবতে না হয় কোথায় আশ্রয় নেবেন। সে স্থানের আশপাশে যেন উঁচু কোনো ফার্নিচার বা গায়ে পড়ার মতো জিনিস না থাকে।
২। অন্ধকারে দেখার জন্য হাতের কাছে টর্চ রাখুন। এছাড়া বাড়িতে মই, শক্ত দড়ি, হেলমেট, হুইসেল, ফার্স্ট এইড বক্স রাখুন।
৩। শুকনো খাবার ও জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখুন।
৪। ভূমিকম্পে গড়িয়ে পড়ার মতো আলগা জিনিস সব সময় বন্ধ শেলফে রাখা উচিত। শেলফগুলো ভালোভাবে দেয়ালের সঙ্গে আটকে রাখুন যেন এগুলো পড়ে না যায়। ভারী মালপত্র শেলফের নিচের দিকে রাখুন। ঝাঁকুনিতে যেন এগুলো গায়ের ওপর না পড়ে।
৫। দেয়ালে ঝোলানো ছবি, আয়না ইত্যাদি বিছানা থেকে দূরে রাখুন।
৬। গ্যাস ও বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি নিরাপদ রাখুন। লিক হওয়া গ্যাসলাইন, বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করে নিন এবং নিয়মিত পরীক্ষা করুন। এগুলোর চাবি কোথায় আছে এবং কীভাবে বন্ধ করতে হয় তা শিখে নিন।
৭। মাঝে মাঝে ভূমিকম্প ও জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হওয়ার মহড়া দিন, যাতে সবাই আয়ত্ত করতে পারে।

ভূমিকম্পের সময় করণীয়:

ভূমিকম্পের সময় বাড়ির ভেতর থাকলে-
১. ড্রপ, কাভার ও হোল্ড অন পদ্ধতিতে মেঝেতে বসে পড়ুন, কোনো মজবুত আসবাবের নিচে আশ্রয় নিন এবং কিছুক্ষণ বসে থাকুন। হেলমেট পরে বা হাত দিয়ে ঢেকে মাথাকে আঘাত থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে রক্ষা করুন।
২. বিছানায় থাকলে মাথা বাঁচাতে বালিশ ব্যবহার করুন। ঘরের ভেতরের দিকের দেয়ালের কাছে বসে আশ্রয় নিতে পারেন।
৩. বাড়ির বাইরের দিকের দেয়াল বা কাচের জানালা বিপজ্জনক। এগুলো থেকে দূরে থাকুন।
৪. বহুতল ভবনের ওপরের দিকে অবস্থান করলে ভূমিকম্প না থামা পর্যন্ত ঘরের ভেতরে থাকাই ভালো।
৫. ভূকম্পন থেমে গেলে বের হয়ে আসুন।
৬. নিচে নামতে চাইলে কোনোভাবেই লিফট ব্যবহার করবেন না। সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে নামুন।

বাড়ির বাইরে থাকলে-
১. খোলা জায়গা খুঁজে আশ্রয় নিন। বহুতল ভবনের প্রান্তভাগের নিচে বা পাহাড়-পর্বতের নিচে কোনোভাবেই দাঁড়াবেন না। ওপর থেকে খণ্ড পড়ে আহত হতে পারেন।
২. লাইটপোস্ট, বিল্ডিং, ভারী গাছ অথবা বৈদ্যুতিক তার ও পোলের নিচে দাঁড়াবেন না।
৩. রাস্তায় ছোটাছুটি করবেন না। মাথার ওপর কাচের টুকরো, ল্যাম্পপোস্ট অথবা বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৪. চলমান গাড়িতে থাকলে গাড়ি থামিয়ে খোলা জায়গায় পার্ক করে গাড়ির ভেতরেই আশ্রয় নিন।
৫. কখনোই ব্রিজ, ফ্লাইওভারে থামবেন না। বহুতল ভবন কিংবা বিপজ্জনক স্থাপনা থেকে দূরে গাড়ি থামান।

ভূমিকম্পের পরে করণীয়:
১. ভূমিকম্প শেষ হলেও আরো কম্পনের জন্য প্রস্তুত থাকুন। বড় ভূমিকম্পের পর আরো কিছু ছোট ভূকম্পন হবার সম্ভাবনা থাকে।
২. কম্পন থেমে গেলেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, তারপর বের হোন। ওপর থেকে ঝুলন্ত জিনিসপত্র কিছুক্ষণ পরও পড়তে পারে।
৩. নিজে আহত কি না পরীক্ষা করুন, অন্যকে সাহায্য করুন। বাড়িঘরের ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করুন। নিরাপদ না হলে সবাইকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে যান।
৪. গ্যাসের সামান্যতম গন্ধ পেলে জানালা খুলে বের হয়ে যান এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করুন।
৫. কোথাও বৈদ্যুতিক স্পার্ক চোখে পড়লে মেইন সুইচ বা ফিউজ বন্ধ করে দিন। ক্ষতিগ্রস্ত বিল্ডিং থেকে সাবধান থাকুন। অগ্নিকাণ্ড হতে পারে।
৬. উদ্ধারকাজের জন্য নামতে হলে হেলমেট, হাতমোজা, জুতা, ফুলপ্যান্ট, ফুলহাতা শার্ট এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ নামুন যেন আপনার কোনো আঘাত না লাগে।
৭. ব্যাটারিচালিত রেডিও রাখুন যেন প্রয়োজনীয় খবর শোনা যায়।
৮. আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখুন। ফায়ার সার্ভিসের ফোন নম্বর রাখুন।

ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে করণীয়:
১. আগুন জ্বালাবেন না। বাড়িতে গ্যাসের লাইন লিক থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
২. ধুলাবালির মধ্যে পড়লে কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিন।
৩. উদ্ধারের অপেক্ষায় থাকুন। জরুরী অবস্থার জন্য রাখা জিনিসপত্র কাজে লাগান।