Sunday 18 March 2018

বিভিন্ন ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি পুরুষ ও মহিলা যে কেউ গ্রহণ করতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো, পুরুষদের ক্ষেত্রে ভেসেকটমি পদ্ধতি আর নারীদের ক্ষেত্রে টিউবাল বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতি।  ভেসেকটমি  পদ্ধতিতে সফলতার হার ৯৯.৮৫% ও নারীদের ক্ষেত্রে টিউবাল বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতির  সফলতার হার ৯৯.৫%। এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় মৌখিক ঔষধ, প্যাচ, যোনি আংটি, এবং ইনজেকশনসহ হরমোন ঘটিত গর্ভনিরোধক ব্যবহার করে।

স্বল্প কার্যকর পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে কনডম, জন্মনিরোধক বড়ি, গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ এবং প্রজনন সচেতনতা পদ্ধতি।
স্থায়ী কার্যকর পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে শুক্রাণু নষ্ট করা এবং পুরুষের বীর্যস্খলনের পূর্বে তা অপসরণ করা।  
নির্বীজন একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতি সাধারণত পরিবর্তন করা যায় না, তবে অন্যান্য পদ্ধতি পরিবর্তন করা যায়।
জরুরী গর্ভনিরোধক পদ্ধতি অনিরাপদ যৌনমিলনের পর কয়েক দিনের মধ্যে গর্ভাবস্থার প্রতিরোধ করতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদী সন্তান জন্মদান থেকে বিরত থাকার জন্য ইমপ্লান্ট, IUD (আই.ইউ.ডি.) বা যোনি আংটি পদ্ধতি নেয়া যায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। যথা: ক) সনাতন পদ্ধতি  খ) আধুনিক পদ্ধতি
ক) সনাতন পদ্ধতিঃ  
যে পদ্ধতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ঐতিহ্যগতভাবে সমাজে প্রচলিত আছে সেগুলোকে সনাতন পদ্ধতি বলে। যেমনঃ
  •     স্বামীর বীর্য বাইরে ফেলা
  •     বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো
  •    মাসিকের নিরাপদকাল মেনে চলা
  •     নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সহবাস থেকে বিরত থাকা বা আত্মসংযম।
খ) আধুনিক পদ্ধতিঃ  
আধুনিক পদ্ধতিকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:  ১) নন-ক্লিনিক্যাল এবং      ২) ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি।
১) নন-ক্লিনিক্যাল:  যে পদ্ধতিগুলো অন্যের সাহায্য ছাড়া নারী-পুরুষ নিজেই ব্যবহার করতে পারে সেগুলোকে  নন-ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি বলে। যেমনঃ
খাবার বড়ি
বহুল ব্যবহৃত ১টি অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ‘খাবার বড়ি’। ১টি বড়ির পাতায় সাধারণত ২৮টি বড়ি থাকে। ২১টি সাদা রঙের বড়ি এবং ৭টি খয়েরি রঙের আয়রন বড়ি। সাদা বড়িতে ২টি হরমোন আছে যা গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে।
এটি প্রতিমাসে ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ রাখে। জরায়ুর মুখের রসকে ঘন করে ফলে শুক্রাণু জরায়ুতে প্রবেশ করতে পারে না এবং নিষিক্ত ডিম্বাণুকে জরায়ুতে গেঁথে যেতে দেয় না।
কনডম
পুরুষদের ব্যবহারের জন্য ১টি নিরাপদ, অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এটি ব্যবহারে শুক্রাণু জরায়ুতে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে না। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি শতকরা ৯৭ ভাগ কার্যকর। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। পাশাপাশি এটি যৌনবাহিত রোগ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। প্রতিবার সহবাসের সময় ১টি নতুন কনডম ব্যবহার করতে হয়। ৫ বছরের বেশি পুরোনো বা মেয়াদউত্তীর্ণ কনডম ব্যবহার করা উচিত নয়।
২)  ক্লিনিক্যাল:  যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহারের জন্য নারী-পুরষকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাদানকারীর সাহায্য নিতে হয় সেগুলোকে ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি বলে। যেমন: অস্থায়ী পদ্ধতি এবং  স্থায়ী পদ্ধতি।
অস্থায়ী পদ্ধতি
ইনজেকশন
সহজ, নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ একটি অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এই ইনজেকশন। এটি ৩ মাস মেয়াদি। কার্যকারিতার হার শতকরা ৯৮ থেকে ৯৯ ভাগ। ইনজেকশনে যে হরমোন ব্যবহৃত হয় সেটা ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু পরিপক্ব হতে বাধা দেয়, জরায়ুর মুখের রসকে ঘন ও আঠালো করে, যাতে শুক্রাণু প্রবেশ করতে না পারে এবং জরায়ুর ভেতরের আবরণকে গর্ভসঞ্চারের অনুপযোগী করে গড়ে তোলে। হাত বা নিতম্বের গভীর মাংসপেশিতে মাসিক শুরু হবার ৭ দিনের মধ্যে ইনজেকশন নিতে হয়। যারা বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন কিংবা প্রতিদিন মনে করে বড়ি খেতে অসুবিধা বোধ করেন তাদের জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী।
আই.ইউ.ডিঃ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌
এটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত জন্মনিরোধক পদ্ধতি গুলোর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাবার বড়ি যেখানে গ্রহণযোগ্য না। যেমনঃ ডায়াবেটিস, এজমা কিংবা হাঁপানি, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সিটি কিংবা কপার-টি সবচেয়ে ভালো। কপার-টি যেকোনো পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে, মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে নেয়া যায় এবং যখন ইচ্ছা আবার খুলে ফেলা যায়। এটি একটি সহজ ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি এবং তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
নরপ্ল্যান্টঃ
দীর্ঘমেয়াদি অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নরপ্ল্যান্ট। কার্যকারিতার মেয়াদ ৫ বছর। নরপ্ল্যান্টের সেটে ৬টি ছোট নরম চিকন ক্যাপ্সুল থাকে, যা মহিলাদের হাতের ভেতরের দিক- কনুইয়ের ওপরে- চামড়ার ঠিক নিচে স্থাপন করা হয়। ইনজেকশনের মতো এখানেও হরমোন থাকে। কাজ করে ঐ একই ভাবে। শতকরা ৯৯ ভাগ কার্যকর। এটি ১ বার গ্রহণে পরবর্তী ৫ বছর অন্য কোনো পদ্ধতি ব্যবহারের ঝামেলা থাকে না। মেয়াদ শেষ হবার আগেও এটি খুলে নেয়া যাবে।
নরপ্ল্যান্ট লাগাতে ও খুলতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডাক্তারের সাহায্য নিতে হয়। হাতের চামড়ার নিচে হালকাভাবে দেখা যায় বলে অনেকে অস্বস্তি বোধ করেন। নরপ্ল্যান্ট লাগানোর ১ মাস পর ক্লিনিকে এসে পরীক্ষা করাতে হয়। পরবর্তীতে ৬ মাস পর এবং এরপর প্রতি বছরে ১ বার এসে পরীক্ষা করাতে হয়।
স্থায়ী পদ্ধতি
পুরুষ বন্ধ্যাকরণ- ভ্যাসেকটমীঃ
ভ্যাসেকটমি বা পুরুষ বন্ধ্যাকরণ পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি। এতে শুক্রকীটবাহী নালী দুটির কিছু অংশ বেঁধে কেটে দেয়া হয়।
নারী বন্ধ্যাকরণ- টিউবেকটমি বা লাইগেশনঃ
খুব ছোট অপারেশনের  মাধ্যমে মহিলারে প্রজনন ক্ষমতাকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করাই হচ্ছে ডিম্ববাহী নালী। জরায়ুর দুই ধারে দুটি ডিম্ববাহী নালী থাকে। সেই নালী দুটির কিছুটা অংশ বেঁধে কেটে দেয়াকে লাইগেশন বলে। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্ব বের হয়ে শুক্রানুর সাথে মিলিত হতে পারে না। ফলে গর্ভ ধারণ হয় না।